আমেরিকা , রবিবার, ০১ জুন ২০২৫ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ম্যাডিসন হাইটসে সশস্ত্র ব্যারিকেড, পুলিশ অভিযানে গ্রেপ্তার ক্রুজ ভ্রমণে জেগে উঠছে ম্যাকিনাক দ্বীপ অবৈধ ভোট দিয়ে মিশিগান থেকে পালিয়ে গেলেন, চীনা ছাত্র সেন্টার লাইনে স্বাধীনতা উৎসব ঘিরে কড়া নিরাপত্তা বিদেশে বসে বিএনপির বিরুদ্ধে বদনাম করছেন ড. ইউনূস : মির্জা আব্বাস কানাডার দাবানলে মিশিগানে বায়ুর মানের অবনতি, সতর্কতা জারি সময়ে এগোচ্ছে আই-৬৯৬ নির্মাণ কাজ ক্লিনটন নদী থেকে মৃতদেহ উদ্ধার, তদন্তে শেরিফ অফিস বাংলাদেশ দূতাবাস মিশিগানে কনস্যুলার সেবা দেবে ৩১ মে ও ১ জুন মিশিগানের সানভির স্পেলিং যাত্রা থেমে গেল সেমিফাইনালে মাউন্ট ক্লেমেন্সে দুই দশক পরে বাজপাখির ঘরে ফেরা : নতুন প্রজন্মের সূচনা জামায়াত নেতা আজহারকে খালাস দিলেন আপিল বিভাগ সচিবালয় ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সোয়াট ও বিজিবি মোতায়েন মুভমেন্ট ফেস্টিভ্যালে প্রাণের সুরে মুখরিত ডেট্রয়েট জেইন ফিল্ডে রক্তাক্ত রাত : গুলিতে নিহত ১, আহত ৩ ডিয়ারবর্নে শহীদ সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধায়  উদযাপিত মেমোরিয়াল ডে আজ মেমোরিয়াল ডে : স্মরণ ও শ্রদ্ধা ডেট্রয়েটে উইকেন্ড ঝড়! টেকনো সঙ্গীতের ঝংকারে মুখরিত ডেট্রয়েট শহর নিরপেক্ষতা সংকটে বিতর্কিত উপদেষ্টা, অপসারণ দাবি বিএনপির

একজন, যিনি আলোকে হার মানিয়েছেন

  • আপলোড সময় : ২৭-০২-২০২৩ ০৩:৪৪:৩৭ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৭-০২-২০২৩ ০৩:৪৪:৩৭ পূর্বাহ্ন
একজন, যিনি আলোকে হার মানিয়েছেন

এ সত্য -সত্য নয়।
আমরা মর্মাহত।। শোকাহত।। 
এ জীবন এত ছোট কেন। 
আমাদের আলোর মিছিলের সাথি নামহীন অবস্থায়  খাটিয়াতে।।

" কেউ খাবে, কেউ খাবে না " তা হবে না। তা হবে না "-  বলে যিনি সিলেট শহর এ মিছিল করতেন আমাদের সাথে,  তিনি শহর ছেড়ে চলে গেলেন অবেলায়। সিলেটের আলোকিত স্বজন মিশফাক আহমেদ মিশু ভাই  নাই। নাই বলা টা যতটা সহজ বাস্তবে অনেক কঠিন। এত প্রানবন্ত একটা সহজ সারল্য পুর্ন জীবনের মানুষ ছিলেন তিনি। ছিলেন, বলতে ও মনটা আবেগাপ্লুত। আমার সাথে শেষের কয়েকটা বছর চলমান ছিল মানবিকতার সারথি হিসাবে ৷ 

যদি পেছনে তাকাই সুদর্শন মানুষটা কলেজ জীবনে সমাজতান্ত্রিক ছিলেন, এবং বিশ্বাসটা আজীবন ধারন করে গেছেন। আমরা মে দিবস, শহীদ  জুয়েল - মুনির - তপন কে নিয়ে মিছিল করতাম, বিপ্লব ও সংহতি দিবস ও  কর্নেল তাহের কে নিয়ে মিছিল করতাম। দাবী আদায়ে সিলেট শহরের রাজপথ কাঁপানো মিছিলে লম্বা এই ভাইটি মিছিলের পেছনে থাকতেন। কখনও সামনে আসতেন না। আমরা জুনিয়রা সামনে থেকেছি অনেক সময়। সিলেট শহরটা তখন সবুজে পুর্ন ছিল। সবাই সবাইকে চিনতাম। 
সেই সময়টা ব্যান্ডের যুগ। সিলেটের প্রথম ব্যান্ড ব্লু ওশেন এ মিশু ভাই ছিলেন। তখন টিভিতে উনাদের ডাক পড়ত। সিলেটের সেই সময়টার ব্লু ওশেন ব্যান্ডটা কে নিয়ে আমাদের অহংকার ছিল। ৬ জন স্বপ্নের মানুষের সাথে তিনি ছিলেন সুপার হিরো। আজও স্মৃতিতে ভাসছে সেই সোনালী দিনের কথা ৷ আমি যে সময়টার কথা বলেছি এর পরে, আরও আড়াই দশকে তিনি পাহাড় সমান কাজ করেছেন। যে গুলো অনেকে বলতে পারবেন। বিশেষ করে রজত ভাল বলতে পারবে। 
তিনি ব্যবসা থেকে সামাজিকতায় সময় দিতেন। আমেরিকায় স্থায়ী ভাবে চলে আসার কথা ছিল। কয়েকটা বছর পরে হয়ত চলে ই আসতেন। সিলেট ছাড়তেন, এখন তিনি পৃথিবীর কোন প্রান্তেই নেই ৷ ভাল মানুষ কম আয়ু নিয়ে আসেন, তাদের তাড়া থাকে বেশী। মিশু ভাই এর ভাল গুনের দিক বিচার করলে তিনি সার্থক জীবন যাপন করেছেন। বয়স কত হবে ৫৫ এর মধ্যে ই হবে। তারপরও এ জীবন যাপিত করেছেন পুরোটাই মানবিক। আসলাম, থাকলাম, চলে গেলাম। রেখে গেলাম বড় বড় চিহ্ন গুলো। আজ নাটক পাড়ায় কান্নার রোল পড়বে। অনেককে ভালবাসতে পারা সার্থক জীবনের উদাহরণ। চে গুয়েবারের মত। 
উনার পরিবারের প্রতি সমবেদনা। লেখাটা কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছে, সাজাতে পারছি না। শহীদ মিনারের বেদিতেই ছিলো সপ্তাহ থেকে সপ্তাহ কাটানো সময়। পরিবারের সাথে সময় না দিয়ে সময় দিয়েছেন সংস্কৃতিতে। বিলুপ্ত প্রায় জাসদের সিলেটের নেতৃত্বে দিয়েছিলেন  মৃত্যুর পুর্ব পর্য়ন্ত। অথচ এই জাসদ টাই এক সময় সিলেট নিয়ন্ত্রণ করত। কেউ দলে না থাকলেও তিনি ছিলেন। এখানেই মিশফাক আহমেদ মিশুর সার্থকতা। 
তখন সেই সময়টাতে (নব্বই শতাব্দীতে)  তিনি জনপ্রিয় মডেল। আবার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের যোদ্ধা। সিলেটের আইডল, যখন রিস্কা দিয়ে যেতেন - সবাই মিশু ভাই যায় বলে তাকাতো। শোষন বঞ্চনার এই সাথি মানুষের মুক্তির চিন্তা করতেন। সিনেমায় হিরো বা নাটক এ যুক্ত হতে  ঢাকা যান নাই। চাইলেই সবই সম্ভব হত। তিনি মিছিলের মানুষ। সংস্কৃতির সাথে তার সখ্যতা ছিল। তিনি তার জীবনের সেরা সম্মানটা পেয়েছেন। মারা যাবার ১০/১১ ঘন্টা আগে প্রথম আলোর ২৪ বছরের সিলেটের অনুষ্ঠানে মধ্যমনি ছিলেন। সেই ছবিগুলো আপলোড করে তিনি বেশী সময় থাকতে পারেন নি ৷ 
৯৬/৯৭ সালে সিলেটের লতিফ সেন্টারে  উনাদের একটা ইলেকট্রনিকস এর দোকান ছিল। সেখানে ফ্রিজ সহ ইলেকট্রনিকস এর নানা সামগ্রী বিক্রি হত ৷ আমরা সেখানে গিয়ে দেখা করতাম। ব্যবসা করেছেন সততার সাথে ৷ ২০১৯ সালে ডিসেম্বরে সিলেট শহীদ মিনারে আমার প্রথম সিডির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উনাকে টেক্সট করে থাকতে বললাম। তিনি সেই অনুষ্টানে ছিলেন ৷ নানা মানবিক কাজে আমাকে নক  করতেন "কলের গাড়ী"র প্রজেক্টে আমি জড়িত হয়ে যেতাম ৷ সামান্য সহযোগিতাতেও খুশি হতেন। কত সহস্র মানুষের জীবনে হাসি ফুটিয়েছিলেন তিনি, বলে শেষ করা যাবে না। 
করোনা কালীন সিলেট শহরের মানুষের সেই কঠিন সময়টাতে মিশু ভাই রাত দিন কাজ করেছেন।  বাসায় বাসায় রাতের বেলা খাবার পৌছিয়েছেন অসচ্ছল ও মধ্যবিত্ত সাংস্কৃতিক কর্মীদের।  উনার সেই মানবিক কাজ অনেকের কাছে অনুকরণীয়। তিনি ভাল একজন সংগঠক ছিলেন। কলের গাড়ী নামের সেই ক্যাম্পেইন টা সারা দেশে সমাদৃত ছিল। আমার সাথে সব সময় কানেক্টেড থাকতেন। 
দোয়া করবেন সবাই। অনেক অসহায় মানুষের মুখে যিনি হাসি ফুটিয়েছিলেন, তিনি ইহজাগতিক জীবন ত্যাগ করেছেন। মিশফাক আহমদ মিশু একটি স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি অন্যরকম মানবিয় গুণাবলীতে সিলেটের ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। অনেকেই আজ উনার জন্য কাঁদবেন, তারা কেউ উনার আত্মীয় নন। তারপরও তারা আজ কাঁদছে। হিন্দু মুসলমান সবার হৃদয় ভারাক্রান্ত, গভীর শুন্যতায় পুর্ন সিলেট শহরের আকাশ বাতাস। বাড়িয়ে বলার বা লেখার অবকাশ নেই। যখন কারও মৃত্যু অনেকের জন্য আপসোস এর কারণ হয়, তখন সৃষ্টিকর্তা খুশি হন। আমরা এই সৌভাগ্য অর্জন করতে পারব না, হয়ত। 
আমি উনার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। আল্লাহর নিকট অনুরোধ জানাই উনার ছোটখাট ভুলগুলো মাপ করে উনাকে সম্মানিত করবেন। আবার মৃত্যু নিয়ে হাহুতাস করাও ঠিক না, আমাদের সবাইকে ছাড়তে হবে পৃথিবী। সবাই দোয়া করবেন উনার পরিবারের জন্য। আমিন।। আমিন।
জুয়েল সাদত
সাংবাদিক-লেখক, ফ্লোরিডা। ৫ নভেম্বর ২০২২ 



নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য

সর্বশেষ সংবাদ
নিউইয়র্কে বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো বৎসরের সেরা নৌবিহার

নিউইয়র্কে বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো বৎসরের সেরা নৌবিহার